বান্দরবান, বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত একটি পার্বত্য জেলা, যা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতির জন্য পরিচিত। এ জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা তার ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কিত।

বান্দরবান জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
বান্দরবানের ইতিহাস বহু প্রাচীন। ১৫৩১ খ্রিষ্টাব্দে তুংগো সাম্রাজ্যের হাইসাওয়াদি রাজ্যের প্রথম সার্কেল প্রধান তবাং শোয়েথীর দিনলিপি থেকে এ অঞ্চলের প্রাচীন তথ্য পাওয়া যায়। পরবর্তীতে, ব্রিটিশ সরকার পঞ্চম বোমং কং হ্লা প্রু (১৭২৭–১৮১১) ও ষষ্ঠ বোমং সাক থাই প্রুকে সার্কেল প্রধান হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। ১৯০০ সালে চিটাগং হিল ট্রাক্টস রেগুলেশন প্রণয়নের মাধ্যমে এই অঞ্চলের স্বকীয়তা প্রতিষ্ঠিত হয়, যা এখনও বহাল রয়েছে।
১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর, ১৯৫১ সালে বান্দরবান পূর্ব পাকিস্তানের মহকুমা হিসেবে প্রশাসনিক কার্যক্রম শুরু করে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর এটি বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্ত হয়। পরবর্তীতে, ১৯৮১ সালের ১৮ এপ্রিল, লামা মহকুমার ভৌগোলিক ও প্রশাসনিক সীমানাসহ সাতটি উপজেলার সমন্বয়ে বান্দরবান পার্বত্য জেলা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা
বান্দরবানের প্রধান সড়ক যোগাযোগের মাধ্যম হলো চট্টগ্রাম-বান্দরবান মহাসড়ক এবং চন্দ্রঘোনা-বান্দরবান সড়ক। এই সড়কগুলো দিয়ে সব ধরনের যানবাহনে চলাচল সম্ভব। জেলার অভ্যন্তরীণ সংযোগ সড়কগুলো মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
চিম্বুক-রুমা
বান্দরবান-রোয়াংছড়ি-রুমা
আজিজনগর-গজালিয়া-লামা
খানহাট-ধোপাছড়ি-বান্দরবান
বান্দরবান-চিম্বুক-থানচি-আলীকদম-বাইশারী-ঘুমধুম
চিম্বুক-টংকাবতী-বার আউলিয়া
জেলার প্রধান যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে সিএনজি চালিত অটোরিকশা ব্যবহৃত হয়।
আন্তঃজেলা বাস যোগাযোগ
ঢাকা থেকে বান্দরবান সরাসরি বাসে যাওয়া যায়। প্রধান বাস সার্ভিসগুলোর মধ্যে রয়েছে:
এস আলম চেয়ারকোচ
ডলফিন চেয়ারকোচ
সৌদিয়া চেয়ারকোচ
ইউনিক চেয়ারকোচ
শ্যামলী চেয়ারকোচ
এই বাসগুলো ঢাকা থেকে সকাল ও রাতে ছাড়ে এবং ভাড়া প্রায় ৬২০ টাকা।
চট্টগ্রাম থেকে বান্দরবান যাওয়ার জন্য পূবালী ও পূর্বাণী বাস সার্ভিস পাওয়া যায়। ভাড়া প্রায় ২০০–৩০০ টাকা এবং সময় লাগে প্রায় ২.৫ থেকে ৩ ঘণ্টা।
অভ্যন্তরীণ যানবাহন ও রুট
বান্দরবান জেলার অভ্যন্তরে বিভিন্ন উপজেলায় যাতায়াতের জন্য চাঁদের গাড়ি, জীপ ও মাইক্রোবাস ব্যবহৃত হয়। উল্লেখযোগ্য রুটগুলো হলো:
বান্দরবান-রোয়াংছড়ি: চাঁদের গাড়ি সকাল ৮:৩০ থেকে বিকাল ৪:০০ পর্যন্ত ছাড়ে।
বান্দরবান-রুমা: চাঁদের গাড়ি সকাল ৯:০০ থেকে বিকাল ৩:০০ পর্যন্ত ছাড়ে।
বান্দরবান-আলীকদম: জীপ ও পূর্বাণী চেয়ারকোচ বিকাল ৩:০০ টায় ছাড়ে।
বান্দরবান-লামা: জীপ ও পূর্বাণী চেয়ারকোচ বিকাল ২:৩০ ও ৩:০০ টায় ছাড়ে।
বান্দরবান-নাইক্ষ্যংছড়ি: মাইক্রোবাস সকাল ৭:০০ টায় ছাড়ে।
বান্দরবান-থানচি: বাস সকাল ৮:০০ থেকে বিকাল ৩:০০ পর্যন্ত ছাড়ে।
বিকল্প যোগাযোগ মাধ্যম
ঢাকা থেকে সরাসরি ট্রেন বা বিমানে বান্দরবান যাওয়ার ব্যবস্থা নেই। তবে, চট্টগ্রাম পর্যন্ত ট্রেন বা বিমানে গিয়ে সেখান থেকে বাসে বান্দরবান যাওয়া যায়। চট্টগ্রাম থেকে বান্দরবান যাওয়ার জন্য পূবালী ও পূর্বাণী বাস সার্ভিস পাওয়া যায়। ভাড়া প্রায় ২০০–৩০০ টাকা এবং সময় লাগে প্রায় ২.৫ থেকে ৩ ঘণ্টা।

বান্দরবান জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা তার ভৌগোলিক বৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে গড়ে উঠেছে। সড়কপথে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং অভ্যন্তরীণ পরিবহনের সহজলভ্যতা এ জেলার পর্যটন ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। যদিও দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চল হওয়ায় কিছু কিছু এলাকায় এখনও যাতায়াত কিছুটা কষ্টসাধ্য, তবে সরকারের উদ্যোগে এবং স্থানীয় প্রশাসনের প্রচেষ্টায় বান্দরবানের যোগাযোগ ব্যবস্থায় ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে।
আরও পড়ুনঃ

2 thoughts on “বান্দরবান জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা”