পাহাড়ের বাসিন্দারা তীব্র পানি সংকটে,বান্দরবানের দুর্গম পাহাড়ি পল্লীগুলোতে বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। বিশুদ্ধ পানির অভাবে নদী ও ঝিরির দূষিত পানি পান করে জীবন ধারণ করছেন দুর্গম এলাকার বাসিন্দারা। ফলে ডায়রিয়া, আমাশয়সহ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন স্থানীয়রা। শুধু তাই নয়, শুষ্ক মৌসুমে ঝিরি-ঝর্ণার পানি শুকিয়ে যাওয়ায় দৈনন্দিন ব্যবহারের পানিরও তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে বিভিন্ন পাড়ায়।

পাহাড়ের বাসিন্দারা তীব্র পানি সংকটে
জেলার দুর্গম পাহাড়ে বসবাসকারীদের পানির প্রধান উৎস নদী ও ঝিরি-ঝর্ণা। কিন্তু শুষ্ক মৌসুমে ঝিরি-ঝর্ণার পানি শুকিয়ে যাওয়ায় দুর্গম এলাকায় বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। দুষিত পানি পান করে ইতোমধ্যে বিভিন্ন পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন ওই সমস্ত এলাকার বাসিন্দারা।
বান্দরবানের অধিকাংশ এলাকায় পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের শত কোটি টাকা ব্যয়ে স্থাপন করা রিংওয়েল-টিউবওয়েল ও জিএফএস লাইনগুলো পড়ে রয়েছে অকেজো অবস্থায়। ফলে নদী ও পাহাড়ি ঝিরি থেকে দৈনন্দিন ব্যবহার্য্য পানি সংগ্রহের জন্যে হাঁটতে হয় কয়েক কিলোমিটার পাহাড়ি পথ। তবে তীব্র তাপদাহের কারণে নদীর পানি শুকিয়ে গেলে দিনদিন পানির আরও সংকট হবে বলে আশঙ্কা স্থানীয়দের।
বান্দরবান সদর উপজেলার পার্শ্ববর্তী ইউনিয়ন সুয়ালক, টংকাবতী ও চিম্বুক পাহাড়ে বসবাসরত পাহাড়ি জনগোষ্ঠীসহ লামা, আলীকদম, রুমা, থানচি উপজেলার দুর্গম এলাকার গ্রামগুলোতে বসবাসরত ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ বিশুদ্ধ পানির সংকট রয়েছে।
বান্দরবান মৃত্তিকা ও পানি সংরক্ষণ কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন,পার্বত্য অঞ্চলে অবাধে বৃক্ষ নিধন, পাহাড় কর্তন ও ঝিরি থেকে পাথর উত্তোলনের ফলে পানির উৎসগুলো ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। আমাদের পরিকল্পিতভাবে বনায়ন করতে হবে। কোনোভাবেই পাহাড় কাটা যাবে না।

ঝিরি ঝর্ণাসহ পাহাড়ের সঙ্গে লেগে থাকা পাথরগুলো উত্তোলন বন্ধ করতে হবে। পাশাপাশি চাষাবাদের ক্ষেত্রেও আমাদের আধুনিক পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। গতানুগতিকভাবে পাহাড়কে ন্যাড়া করে গাছপালা কেটে শূন্য করে চাষাবাদ করা যাবে না। তাহলে পাহাড়ের মাটি দ্রুত ধুয়ে গিয়ে ঝিরি ঝর্ণাতে পাড়বে। ঝিরির গভীরতা কমে গিয়ে পানিশূন্য হয়ে পড়বে বলে মনে করেন এই পরিবেশ বিশেষজ্ঞ।
এ বিষয়ে বান্দরবান জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী শর্মীষ্ঠা আচার্য্য বলেন, শুষ্ক মৌসুমে বান্দরবানের মানুষ খুবই পানি সংকটে ভোগে। এটা নিরসনের জন্য কিছু প্রকল্প চলমান রয়েছে। প্রত্যেকটি ইউনিয়নে ২৬টি করে ওয়াটার মেশিন দেওয়ার বিধান রয়েছে। এ প্রকল্পটি তিন বছর ধরে বাস্তবায়িত হচ্ছে।
বেশ কিছু জায়গা আছে যেখানে আমরা টিউবওয়েল করতে পারি না। সেসব জায়গায় আমরা জিএফএসটা দেই। সেটাও শুষ্ক মৌসুমে ঠিকভাবে পানি পাওয়া যায় না। তাই আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে ভবিষ্যতে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে কিছুটা পিউরিফাই করে মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পারলে মানুষের পানির চাহিদা কিছুটা মিটবে। সেভাবে একটা প্রকল্প আমাদের পার্বত্য মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আশা করছি সেটা আগামী জুনের মধ্যেই অনুমোদন পেয়ে যাবো।

আরও পড়ুন:

2 thoughts on “পাহাড়ের বাসিন্দারা তীব্র পানি সংকটে”