বান্দরবান পার্বত্য জেলা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত একটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর অঞ্চল। এটি পাহাড়, নদী, বন ও বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতির সমন্বয়ে গঠিত। যদিও এটি একটি দূর্গম এলাকা, তবে প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ হওয়ায় বান্দরবান জেলার অর্থনৈতিক সম্ভাবনা অপরিসীম।

বান্দরবান জেলার ব্যবসা
শিল্প ও কারখানা
বান্দরবান জেলায় বর্তমানে নিম্নলিখিত শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহ রয়েছে:
সাত্তার ম্যাচ ওয়ার্কস: দুটি ম্যাচ কারখানা।
আজিজ উদ্দিন ফ্যাক্টরি: স্থানীয়ভাবে পরিচিত একটি শিল্প প্রতিষ্ঠান।
বাংলাদেশ বন শিল্প উন্নয়ন সংস্থা: বনজ সম্পদ ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
বনজ ও কৃষিজ সম্পদ
বান্দরবান জেলার বিস্তীর্ণ অশ্রেণীভুক্ত বনাঞ্চলে সেগুন, গামারী, গর্জন, শিল কড়ই, তৈলসুর ইত্যাদি মূল্যবান কাঠ এবং বাঁশ পাওয়া যায়। এছাড়া, সাংগু ও মাতামুহুরী নদী বনজ সম্পদ আহরণ ও বিপণনে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
কৃষিজ ফসলের মধ্যে উল্লেখযোগ্য:
আনারস: ১,৯৫০ হেক্টরে চাষ হয়ে ৭৫,৩০০ মেট্রিক টন উৎপাদন।
কলা: ৩,৮০০ হেক্টরে চাষ হয়ে ৭৬,৪০০ মেট্রিক টন উৎপাদন।
কাঁঠাল: ২,১০০ হেক্টরে চাষ হয়ে ৫০,২০০ মেট্রিক টন উৎপাদন।
কমলা: ৩৮০ হেক্টরে চাষ হয়ে ৯,৫০০ মেট্রিক টন উৎপাদন।
লেবু: ১,১০০ হেক্টরে চাষ হয়ে ১৮,৭০০ মেট্রিক টন উৎপাদন।
তবে, জেলায় কোনো ফল প্রক্রিয়াজাতকরণ প্লান্ট বা হিমাগার না থাকায় উৎপাদিত ফলের একটি বড় অংশ নষ্ট হয়ে যায়। ফল প্রক্রিয়াজাতকরণ প্লান্ট এবং হিমাগার স্থাপন করা হলে এই সমস্যা লাঘব হবে।
তুলা ও রাবার চাষ
বান্দরবানে তুলা চাষের সম্ভাবনা উজ্জ্বল। বর্তমানে ১১,০০০ একর জমিতে কুমিল্লা ভ্যারাইটি তুলা চাষ হচ্ছে, যা থেকে বছরে ৬১,০০০ কেজি (১,৬৪৮ বেল) আঁশ তুলা উৎপন্ন হয়। এছাড়া, রাবার বাগান স্থাপন শুরু হয়েছে এবং কিছু বাগানে ইতিমধ্যে রাবার উৎপাদন শুরু হয়েছে। এটি দেশের রপ্তানি খাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনা
সাংগু নদী একটি খরস্রোতা নদী, যার উজানে বাঁধ দিয়ে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে, এতে স্থানীয় বাসিন্দাদের ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে। এই বিষয়ে পূর্বে প্রাথমিক জরিপ চালানো হলেও পরবর্তীতে কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। বিষয়টি পুনরায় বিবেচনায় আনা যেতে পারে।
পর্যটন শিল্প
বান্দরবান তার মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য এবং বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের জন্য পরিচিত। তবে, সাম্প্রতিক সময়ে নিরাপত্তাজনিত কারণে পর্যটকদের ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে, যা পর্যটন খাতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। অনেক হোটেল, রিসোর্ট ও রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ীরা ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছেন। পর্যটন শিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করতে নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নয়ন এবং পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় অবকাঠামো নির্মাণ জরুরি।

বান্দরবান জেলা প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ এবং কৃষি, বনজ, শিল্প ও পর্যটন খাতে বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। তবে, এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে প্রয়োজন পরিকল্পিত উদ্যোগ, অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ। স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণ এবং সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতার মাধ্যমে বান্দরবান জেলার অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব।
আরও পড়ুনঃ

১ thought on “বান্দরবান জেলার ব্যবসা”