প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি বান্দরবান, বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত একটি পার্বত্য জেলা, যা চট্টগ্রাম বিভাগের অন্তর্গত। এ জেলার আয়তন ৪,৪৭৯.০৩ বর্গ কিলোমিটার এবং জনসংখ্যা প্রায় ৪,৮১,১০৯ জন।

বান্দরবান জেলার সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল
সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য ও ঐতিহ্য
বান্দরবান বাংলাদেশের একমাত্র জেলা যেখানে পার্বত্য চট্টগ্রামের ১১টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী—মারমা, ম্রো, ত্রিপুরা, বম, তঞ্চঙ্গ্যা, চাকমা, চাক, খেয়াং, খুমী, লুসাই ও পাংখোয়া—একসাথে বসবাস করে। এই বহুজাতিক ও বহু-ধর্মীয় সহাবস্থান জেলার সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলকে করে তুলেছে বৈচিত্র্যময় ও সম্প্রীতিপূর্ণ।
সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ও উদ্যোগ
১৯৭৮ সালে রাঙ্গামাটিতে উপজাতীয় সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয়, যা ১৯৮৮ সালে বান্দরবানে স্থানান্তরিত হয়ে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট হিসেবে কার্যক্রম শুরু করে। এই ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সংস্কৃতি সংরক্ষণ, গবেষণা ও উন্নয়ন সাধিত হচ্ছে। ২০০৬ সালের মধ্যে ইনস্টিটিউটের আওতায় জাদুঘর, গ্রন্থাগার, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, মিলনায়তন ও আবাসিক ভবনসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মিত হয়েছে।
উৎসব ও লোকসংস্কৃতি
বান্দরবানে বসবাসরত ১১টি জাতিগোষ্ঠীর অংশগ্রহণে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে অন্যতম প্রাণবন্ত ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যে ভরপুর ‘সাংগ্রাই’ উৎসব শুরু হয়েছে। এই উৎসবের মাধ্যমে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মানুষ তাদের নিজস্ব ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে, গানের সুর ও তালের সঙ্গে আনন্দঘন পরিবেশে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও পর্যটন
বান্দরবান জেলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যও এর সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের অংশ। এখানে রয়েছে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পর্বত শৃঙ্গ তাজিংডং ও কেওক্রাডাং, মনোমুগ্ধকর চিম্বুক পাহাড়, বগালেক, নীলগিরি, নীলাচল এবং মেঘলা পর্যটন কেন্দ্র। এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য পর্যটকদের আকৃষ্ট করে এবং জেলার অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

বান্দরবান জেলার সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল একটি বৈচিত্র্যময় ও সম্প্রীতিপূর্ণ পরিবেশের প্রতিচ্ছবি। এখানে বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সহাবস্থান, তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সমন্বয়ে একটি অনন্য সাংস্কৃতিক পরিবেশ গড়ে উঠেছে। এই সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল বাংলাদেশের জাতীয় সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করেছে এবং ভবিষ্যতে আরও উন্নয়ন ও সংরক্ষণের মাধ্যমে এটি আরও বিকশিত হবে।
আরও পড়ূনঃ

1 thought on “বান্দরবান জেলার সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল”