রুমা একটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর উপজেলা, যা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত বান্দরবান জেলার অন্তর্গত। পাহাড়-ঝর্ণা, নৃগোষ্ঠীর বৈচিত্র্য, বৌদ্ধ সংস্কৃতি এবং পর্যটন সম্ভাবনার জন্য এটি অন্যতম আকর্ষণীয় একটি এলাকা।

রুমা উপজেলার ভৌগোলিক পরিচিতি
আয়তন: ৪৯২.১০ বর্গ কিমি
অবস্থান:
অক্ষাংশ: ২১°৫৩´ থেকে ২২°১০´ উত্তর
দ্রাঘিমাংশ: ৯২°১৭´ থেকে ৯২°৩৪´ পূর্ব
সীমানা:
উত্তর: রোয়াংছড়ি উপজেলা
দক্ষিণ: থানচি উপজেলা
পূর্ব: বিলাইছড়ি উপজেলা
পশ্চিম: বান্দরবান সদর ও লামা উপজেলা
রুমা উপজেলার জনসংখ্যা ও ধর্মীয় পরিসংখ্যান
| বিবরণ | সংখ্যা |
|---|---|
| মোট জনসংখ্যা | ২৬,৫৮৯ |
| পুরুষ | ১৪,৪১৪ |
| নারী | ১২,১৭৫ |
| মুসলিম | ১,৮১৩ |
| হিন্দু | ৪১৬ |
| বৌদ্ধ | ৯,৯০৯ |
| খ্রিস্টান | ১১,৮৮০ |
| অন্যান্য | ২,৫৭১ |
রুমা উপজেলার প্রশাসনিক তথ্য
প্রশাসনিক গঠন:
রুমা থানা: প্রতিষ্ঠিত ১৯৭৬ সালে
উপজেলা রূপান্তর: ১৯৮৫ সালে
ইউনিয়ন: ৪টি
রুমা সদর
পাইন্দু
রেমাক্রী
গ্যালেংগা
রুমা উপজেলার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
রুমা অঞ্চল এক সময় আরাকান রাজ্যের অন্তর্গত ছিল। আরাকানের রাজা মেং বেং (সুলতান জাবুকশাহ নামে পরিচিত) ১৫৩২-১৫৫৩ পর্যন্ত ২১ বছর এ অঞ্চল শাসন করেন। ১৬৬৬ সালে মুঘল বাহিনী এই অঞ্চল দখল করে। পরবর্তীতে এটি ম্রকু রাজবংশের শাসনাধীন ছিল ১৭৮৪ সাল পর্যন্ত। পরে ব্রিটিশ শাসনের অধীনে আসে।
রুমা উপজেলার প্রধান নদী ও জলাশয়
নদী: সাঙ্গু নদী — যা পাহাড়ি অঞ্চলের জীবনরেখা হিসেবে পরিচিত।
রুমা উপজেলার শিক্ষা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
| ধরণ | সংখ্যা |
|---|---|
| কলেজ | ১ |
| মাধ্যমিক বিদ্যালয় | ৬ |
| প্রাথমিক বিদ্যালয় | ৩৭ |
| কমিউনিটি বিদ্যালয় | ৬ |
| কিন্ডার গার্টেন | ১ |
| শিক্ষার গড় হার | ২৬.৭% (পুরুষ ৩৩.৭%, মহিলা ১৮.৪%) |
উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠান:
রুমা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়
পাইন্দু হেডম্যান পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
চাইন্দা হেডম্যান পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
রুমা বাজার আদর্শ পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
রুমা উপজেলার ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান
| ধরণ | সংখ্যা |
|---|---|
| মসজিদ | ৬ |
| মন্দির | ১ |
| মঠ | ৭ |
| কেয়াং (বৌদ্ধ বিহার) | ৩৫ |
| আশ্রম | ১ |
উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় স্থান:
মিঝিড়িপাড়া বৌদ্ধ মন্দির
রুমা উপজেলার সাংস্কৃতিক ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান
লাইব্রেরি: ১
ক্লাব: ১
সংগীত একাডেমি: ১
সাংস্কৃতিক সংগঠন: ৩
মহিলা সংগঠন: ২
অডিটোরিয়াম: ১
খেলার মাঠ: ২
রুমা উপজেলার পর্যটন আকর্ষণ
রুমা উপজেলা পর্যটকদের জন্য একটি চমৎকার গন্তব্য। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অভিভূত করার মতো।
| দর্শনীয় স্থান | বিবরণ |
|---|---|
| বগা লেক (Bagakain Lake) | বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উচ্চতার হ্রদ, যার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অসাধারণ |
| তাজিনডং পাহাড় | দেশের সর্বোচ্চ চূড়া হিসেবে পরিচিত |
| কেওক্রাডং পাহাড় | অন্যতম জনপ্রিয় ট্রেকিং গন্তব্য |
| রিজুক ঝর্না | পাহাড় বেয়ে নেমে আসা মনোমুগ্ধকর জলপ্রপাত |
| মিঝিড়িপাড়া বৌদ্ধ মন্দির | ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যবাহী স্থান |
রুমা উপজেলার জনগোষ্ঠীর পেশা ও আয়ের উৎস
| আয়ের উৎস | শতকরা হার (%) |
|---|---|
| কৃষি | ৮৪.৭৯ |
| অকৃষি শ্রমিক | ০.৮৮ |
| শিল্প | ০.৪২ |
| ব্যবসা | ৫.৭ |
| পরিবহণ ও যোগাযোগ | ০.১ |
| চাকরি | ৩ |
| নির্মাণ | ০.১৫ |
| ধর্মীয় সেবা | ০.১৫ |
| রেন্ট ও রেমিটেন্স | ০.১৩ |
| অন্যান্য | ৪.৬৮ |
রুমা উপজেলার কৃষি ও ফলজ উৎপাদন
| বিষয়ে | বিবরণ |
|---|---|
| প্রধান ফসল | ধান, তিল, তুলা, হলুদ, আদা, বাদাম, শাকসবজি |
| বিলুপ্তপ্রায় ফসল | সরিষা |
| প্রধান ফল | কলা, কাঁঠাল, কমলা, আনারস, পেঁপে |
রুমা উপজেলার ভূমি মালিকানা ও ব্যবহার
| বিভাগ | শতকরা হার (%) |
|---|---|
| ভূমিমালিক | ৪০.৭৪ |
| ভূমিহীন | ৫৯.২৬ |
| শহরে কৃষিজমি | ৪৩.২৬ |
| গ্রামে কৃষিজমি | ৪০.০৬ |
রুমা উপজেলার শিল্প, বাজার ও রপ্তানি
| বিভাগ | বিবরণ |
|---|---|
| শিল্প | করাতকল, ইটভাটা |
| হাট-বাজার | ৪টি — রুমা বাজার, মুরুম ঘাট বাজার, ঘালঙ্গা বাজার অন্যতম |
| রপ্তানি পণ্য | কলা, পেঁপে, আনারস |
রুমা উপজেলার বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ
বিদ্যুৎ:
সবকটি ইউনিয়ন পল্লি বিদ্যুতায়নের আওতায়
তবে কেবল ৬.৭৪% পরিবার বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারে
পানির উৎস:
নলকূপ: ৮.০৯%
ট্যাপ: ৫.৩৬%
পুকুর: ২.৬৯%
অন্যান্য: ৮৩.৮৬%
রুমা উপজেলার স্যানিটেশন পরিস্থিতি
| বিভাগ | স্বাস্থ্যকর (%) | অস্বাস্থ্যকর (%) | কোনো ল্যাট্রিন নেই (%) |
|---|---|---|---|
| গ্রাম | ১.৮৬ | ১৫.৬৬ | – |
| শহর | ১১.১৫ | ৬৩.৭৬ | – |
| মোট | ৩.৮৪ | ২৫.৯৩ | ৭০.২৩ |
রুমা উপজেলার স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র
| স্বাস্থ্য কেন্দ্র | সংখ্যা |
|---|---|
| উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স | ১ |
| আর্মি মেডিকেল সেন্টার | ১ |
| স্বাস্থ্য কেন্দ্র | ১ |
| পশু চিকিৎসা কেন্দ্র | ১ |
রুমা উপজেলার প্রাকৃতিক সম্পদ
বাঁশ
পাথর
রুমা উপজেলা একটি অনন্য পর্যটন ও নৃ-সংস্কৃতি বৈচিত্র্যের আধার। পাহাড়ি সৌন্দর্য, প্রাকৃতিক সম্পদ এবং ভিন্নধর্মী সংস্কৃতি এখানকার মূল পরিচয়। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে আরও সচেতন উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে রুমা হতে পারে দেশের অন্যতম আদর্শ পার্বত্য উপজেলা।
