বান্দরবান জেলার দর্শনীয় স্থান

বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপার লীলাভূমি হিসেবে যেসব জেলা পরিচিত, তার মধ্যে বান্দরবান অন্যতম। অপার পাহাড়, সবুজ অরণ্য, কুয়াশা-মাখা শৃঙ্গ, ছুটে চলা ঝর্ণা আর নীল জলরাশি – সবকিছু মিলে বান্দরবান এক অনন্য গন্তব্য, যা প্রকৃতিপ্রেমী ও পর্যটকদের কাছে স্বপ্নের জায়গা।

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় বান্দরবান জেলার দর্শনীয় স্থান

 

google news
গুগোল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

বান্দরবান-জেলা বাংলাদেশের ৮টি বিভাগের মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগের অন্তর্গত। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাংশে ২১°১১´ থেকে ২২°২২´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯২°০৪´ থেকে ৯২°৪১´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ জুড়ে বান্দরবান জেলার অবস্থান। রাজধানী ঢাকা থেকে এই জেলার দূরত্ব প্রায় ৩২৫ কিলোমিটার এবং চট্টগ্রাম বিভাগীয় সদর থেকে প্রায় ৭৫ কিলোমিটার

এ জেলার পশ্চিমে কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম জেলা, উত্তরে রাঙামাটি, পূর্বে মিয়ানমারের চিন রাজ্য, এবং দক্ষিণ ও পশ্চিমে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য অবস্থিত। ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে এই জেলা একটি আন্তর্জাতিক সীমান্ত সংলগ্ন ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ জনপদ।

নাফাখুম-রেমাক্রি ট্রেইল
নাফাখুম-রেমাক্রি ট্রেইল

প্রকৃতির অলংকার: বান্দরবানের দর্শনীয় স্থানসমূহ

বান্দরবান বাংলাদেশের নৈসর্গিক সৌন্দর্য্যের লীলা ভূমি। পাহাড়, নদী, ঝর্ণা, আদিবাসী সংস্কৃতি ও নীল আকাশ একত্রে মিলে এখানে গড়ে তুলেছে এক স্বপ্নের রাজ্য। নিচে উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থানসমূহ তুলে ধরা হলো:

🌊 আমিয়াখুম জলপ্রপাত

“আমিয়াখুম” বাংলাদেশের অন্যতম নিভৃত ও রহস্যময় জলপ্রপাত। “খুম” মারমা ভাষায় জলপ্রপাতকে বোঝায়। পাহাড়ি সাঙ্গু নদীর বয়ে চলার পথে সৃষ্টি হওয়া খুমগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। খুমের পানির বিশেষত্ব হলো – এখানে পানি কখনো পুরোপুরি শুকায় না, যা একে বান্দরবানের প্রকৃতির বিস্ময় করে তুলেছে।

🌄 কেওক্রাডং

বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ, যার উচ্চতা প্রায় ৩,১৭২ ফুট। এর চূড়া থেকে চারপাশের পাহাড়ি ভিউ এক কথায় অসাধারণ। পাহাড় আর মেঘের মধ্যে হাঁটতে হাঁটতে এখানে পৌঁছানো যেন এক অ্যাডভেঞ্চারের অভিজ্ঞতা।

🏞️ তাজিংডং (বিজয় শৃঙ্গ)

বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ হিসেবে পরিচিত। স্থানীয়ভাবে এটি “তাজিংডং” নামে পরিচিত, যার মানে “বিগ মাউন্টেন”। অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের কাছে এটি বিশেষ আকর্ষণীয়।

🌫️ চিম্বুক পাহাড় ও পাহাড়ি গ্রাম

চিম্বুক পাহাড় বান্দরবান শহর থেকে মাত্র ২৫ কিলোমিটার দূরে। এটি বাংলাদেশের অন্যতম উঁচু পয়েন্ট যা গাড়িতে চড়া যায়। পাহাড়ি গ্রাম ও জনজীবনের স্পর্শে এই অঞ্চল পর্যটকদের মনে রেখে যায় এক অমলিন ছাপ।

🌊 নাফাখুম জলপ্রপাত

বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ জলপ্রপাত, যা রেমাক্রী নদীতে অবস্থিত। বর্ষায় এর রূপ আরও ভয়ংকর সুন্দর হয়ে ওঠে। ছোট্ট ট্রেকিং এবং নৌযাত্রার পর এটি দর্শন করা যায়।

🌫️ নীলগিরি পর্যটন কেন্দ্র

বান্দরবান সেনাবাহিনী পরিচালিত পর্যটন কেন্দ্র, যেখানে থেকে আপনি মেঘের রাজ্যে নিজেকে খুঁজে পাবেন। এখানকার কটেজ, ভিউ পয়েন্ট ও সুনিপুণ বাতাস পর্যটকদের মুগ্ধ করে।

🌄 নীলাচল পর্যটন কেন্দ্র

বান্দরবান শহরের কাছেই অবস্থিত একটি বিখ্যাত হিল টপ ভিউ পয়েন্ট। এখানে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। রাতের বেলায় শহরের বাতি যেন তারা হয়ে ওঠে।

🌊 বগাকাইন হ্রদ (বগা লেক)

বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উচ্চতায় অবস্থিত স্বচ্ছ নীল পানির হ্রদ। স্থানীয় ভাষায় একে “বগা লেক” বলা হয়। এর গভীরতা ও অবস্থান একে রহস্যময় করে তুলেছে।

💦 ঋজুক ঝর্ণা, চিংড়ি ঝর্ণা, জাদিপাই ঝর্ণা, ডামতুয়া ঝর্ণা, ত্লাবং ঝর্ণা, তিনাপ সাইতার, দেবতাখুম

এইসব ঝর্ণা ও খুমগুলো বান্দরবান জেলার গহীন প্রাকৃতিক পরিবেশে অবস্থিত। পানির কোলাহল, পাথরের ভাঙা শব্দ ও বনাঞ্চলের নীরবতা একত্রে নির্মাণ করে রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা।

🧘‍♂️ বুদ্ধ ধাতু জাদি, রাজবিহার ও উজানিপাড়া বিহার

বান্দরবানে বৌদ্ধ সংস্কৃতি ও স্থাপত্যের নিদর্শন দেখা যায় এই বিহারগুলোতে। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্মিত বুদ্ধ ধাতু জাদি স্বর্ণের মতো ঝলমল করে। বৌদ্ধ ভিক্ষুদের জীবনধারা এখানে প্রত্যক্ষ করা যায়।

🏕️ রেমাক্রী ও জীবননগর

প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য আদর্শ গন্তব্য। নৌকায় চড়ে নদী পেরিয়ে পাহাড়ি পথ ধরে হেঁটে যেতে হয় এসব জায়গায়। স্থানীয় সংস্কৃতি ও হ্রদের পানি সবই এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা প্রদান করে।

🏞️ ডিম পাহাড় ও তমা তুঙ্গী

এই দুটি পর্বতচূড়া নতুন প্রজন্মের অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ডিম পাহাড়ের নাম এসেছে এর ডিমের মতো গোলাকার শৃঙ্গের কারণে।

🛡️ বান্দরবান সেনানিবাস ও সরকারি কলেজ

বান্দরবানের উন্নয়ন ও নিরাপত্তায় সেনাবাহিনীর ভূমিকা অনস্বীকার্য। পাশাপাশি বান্দরবান সরকারি কলেজ শিক্ষাক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

শৈলপ্রপাত

বান্দরবান শহরের খুব কাছেই অবস্থিত একটি মনোমুগ্ধকর ঝর্ণা, যা সহজেই যাতায়াতযোগ্য। পরিবার নিয়ে ভ্রমণের জন্য এটি আদর্শ।

বান্দরবান শুধু পাহাড় বা নদী নয় – এটি একটি অভিজ্ঞতা, অনুভব ও আত্মার প্রশান্তি। যারা প্রকৃতি ভালোবাসেন, নিঃসঙ্গতাকে আলিঙ্গন করতে চান বা অ্যাডভেঞ্চারে মেতে উঠতে চান – তাদের জন্য বান্দরবান এক অবিস্মরণীয় গন্তব্য। প্রতিটি দর্শনীয় স্থান যেন প্রকৃতির একেকটি কবিতা, যা হৃদয়ে গেঁথে থাকে আজীবন।

গ্যালারী:

২ thoughts on “বান্দরবান জেলার দর্শনীয় স্থান”

Leave a Comment