আলিকদম উপজেলা বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবান জেলার একটি অন্যতম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যপূর্ণ ও বৈচিত্র্যপূর্ণ উপজেলা। উঁচু পাহাড়, নদী, আদিবাসী সংস্কৃতি, কৃষি ও ইতিহাসে সমৃদ্ধ এ অঞ্চল ভ্রমণপিপাসু ও গবেষকদের কাছে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু।

আলিকদম উপজেলা ভৌগোলিক তথ্য
| বিষয় | বিবরণ |
|---|---|
| আয়তন | ৮৮৫.৭৮ বর্গ কিমি |
| অবস্থান | ২১°২১´ থেকে ২১°৫০´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯২°১৫´ থেকে ৯২°৩৪´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ |
| সীমানা | উত্তরে লামা উপজেলা, দক্ষিণে মায়ানমারের আরাকান রাজ্য, পূর্বে থানচি উপজেলা, পশ্চিমে লামা ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা |
| ভূপ্রকৃতি | বান্দরবানের পার্বত্য অঞ্চলের অদূরে সমতল ভূমি ও পাহাড়ি অঞ্চল |
উল্লেখযোগ্য পাহাড়: থাইংকিয়াং তাং, রুংরাং তাং ও সারা তাং
প্রধান নদী: মাতামুহুরী
জনসংখ্যা ও ধর্মীয় বিবরণ
| বিবরণ | সংখ্যা |
|---|---|
| মোট জনসংখ্যা | ৩৫,২৬৪ |
| পুরুষ | ১৯,২৯০ |
| নারী | ১৫,৯৭৪ |
| মুসলিম | ২০,৭৩৭ |
| হিন্দু | ১,৫১৭ |
| বৌদ্ধ | ২,০৩০ |
| খ্রিস্টান | ১০,৯১৭ |
| অন্যান্য | ৬৩ |
আদিবাসী জনগোষ্ঠী: চাকমা, মারমা, মুরং, ত্রিপুরা প্রভৃতি।
প্রশাসনিক ইতিহাস
স্থাপিত থানা: ১৯৭৬ সালে লামা ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার কিছু অংশ নিয়ে গঠিত।
উপজেলা রূপান্তর: ১৯৮৩ সালে।
ঐতিহাসিক গুরুত্ব
নবম শতাব্দীতে আরাকান রাজ্যের অধীনে ছিল।
পঞ্চদশ ও ষোড়শ শতকে বাংলার সুলতানদের অস্থায়ী নিয়ন্ত্রণ।
১৭৫৬ সালে মুগলদের জয়ে আরাকানদের শাসনের অবসান ঘটে।
আরাকানদের শেষ শাসক: কং হ্লা প্রু – যিনি আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হন।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান
| প্রতিষ্ঠান | সংখ্যা |
|---|---|
| মসজিদ | ৩৮ |
| মন্দির | ৫ |
| গির্জা | ৩ |
| কেয়াং (বৌদ্ধ মঠ) | ১৭ |
শিক্ষা
| শিক্ষা স্তর | সংখ্যা |
|---|---|
| মাধ্যমিক বিদ্যালয় | ৪ |
| প্রাথমিক বিদ্যালয় | ২২ |
| কমিউনিটি বিদ্যালয় | ৪ |
| কিন্ডার গার্টেন | ২ |
| মাদ্রাসা | ২ |
গড় সাক্ষরতার হার:
মোট: ২৭.২%
পুরুষ: ৩১.৭%
মহিলা: ২১.৬%
উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান:
আলিকদম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়
আলিকদম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়
আলিকদম আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
সোনাইছড়ি রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়
সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান
| প্রতিষ্ঠান | সংখ্যা |
|---|---|
| প্রেসক্লাব | ১ |
| লাইব্রেরি | ১ |
| সিনেমা হল | ১ |
| সংগীত একাডেমি | ১ |
| অডিটরিয়াম | ১ |
| মহিলা সংগঠন | ২ |
| খেলার মাঠ | ১ |
| এতিমখানা | ২ |
দর্শনীয় স্থান
মেরাইনডং পাহাড়: প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য একটি বিখ্যাত গন্তব্য।
আয় ও অর্থনীতি
| আয়ের উৎস | শতাংশ |
|---|---|
| কৃষি | ৫৯.২৭% |
| অকৃষি শ্রমিক | ৯.৩০% |
| ব্যবসা | ১২.৫২% |
| চাকরি | ৫.২৯% |
| নির্মাণ | ০.৩৮% |
| ধর্মীয় সেবা | ০.২৭% |
| রেন্ট ও রেমিটেন্স | ০.০৩% |
| পরিবহন ও যোগাযোগ | ০.৪৮% |
| অন্যান্য | ১২.৪৬% |
কৃষি ও কৃষিভূমি
| বিবরণ | শতাংশ |
|---|---|
| ভূমিমালিক | ২৯.০৩% |
| ভূমিহীন | ৭০.৯৭% |
| শহরে কৃষিজমি | ২৬.৩১% পরিবারের |
| গ্রামে কৃষিজমি | ৩০.৬০% পরিবারের |
প্রধান ফসল: ধান, আলু, তামাক, বাদাম, শাকসবজি
প্রধান ফল: কলা, কাঁঠাল, লিচু, পেঁপে
শিল্প ও ব্যবসা
| খাত | বিবরণ |
|---|---|
| শিল্প | প্লাইউড ফ্যাক্টরি, টোবাকো ফ্যাক্টরি, স’মিল, ইটভাটা |
| কুটির শিল্প | মৃৎশিল্প, লৌহশিল্প, কাঠ ও বাঁশের কাজ, বেতের পণ্য |
| হাট-বাজার | আলিকদম সদর হাট, তাইনছড়ি হাট |
| রপ্তানি দ্রব্য | কলা, বাঁশ, আদা, হলুদ, শাকসবজি |
অবকাঠামো ও সেবাসমূহ
বিদ্যুৎ:
পল্লীবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন
বিদ্যুৎ সুবিধাপ্রাপ্ত পরিবার: ১৩.২৪%
পানি সরবরাহ:
| উৎস | শতাংশ |
|---|---|
| নলকূপ | ৪৪.২৮% |
| ট্যাপ | ১.৬২% |
| পুকুর | ১৪.৫৫% |
| অন্যান্য | ৩৯.৫৫% |
স্যানিটেশন:
| স্যানিটেশন ধরণ | মোট | শহরে | গ্রামে |
|---|---|---|---|
| স্বাস্থ্যকর | ৮.২৬% | ১৪.৯২% | ৪.৪৪% |
| অস্বাস্থ্যকর | ৬১.৭১% | ৬৫.৬৭% | ৫৯.৪৩% |
| কোনো ল্যাট্রিন নেই | ৩০.০৩% | — | — |
স্বাস্থ্যসেবা
| সেবা কেন্দ্র | সংখ্যা |
|---|---|
| উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স | ১ |
| পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র | ১ |
| কমিউনিটি ক্লিনিক | ৩ |
| পশু চিকিৎসা কেন্দ্র | ১ |

আলিকদম উপজেলা তার বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি, ইতিহাস, প্রকৃতি এবং আদিবাসী জীবনযাত্রার জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। পাহাড়, নদী, বনায়ন ও কৃষি-নির্ভর অর্থনীতি এখানকার মানুষের জীবনযাত্রাকে প্রভাবিত করে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও এটি একটি সম্ভাবনাময় অঞ্চল, যেখানে পর্যটন, কুটিরশিল্প ও প্রাকৃতিক সম্পদের সদ্ব্যবহার ভবিষ্যৎ উন্নয়নের দরজা খুলে দিতে পারে।
গ্যলারী:


















