বান্দরবান জেলার নামকরণের ইতিহাস

বান্দরবান—শব্দটি উচ্চারণেই যেন একধরনের রহস্য ও সৌন্দর্যের অনুভব জেগে ওঠে। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব পার্বত্য অঞ্চলের এই জেলার নামকরণ ঘিরে রয়েছে এক চমৎকার কিংবদন্তি ও ভাষাগত বিবর্তনের গল্প। এটি কেবল একটি ভূখণ্ডের নাম নয়, বরং এর পেছনে আছে স্থানীয় সংস্কৃতি, ভাষা, প্রকৃতি এবং মানুষদের সাথে সম্পর্কিত ইতিহাস ও রূপকথা।

 

google news
গুগোল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

বান্দরবান জেলার নামকরণের ইতিহাস

 

🐒 কিংবদন্তির গল্পে ‘বান্দরবান’ নামের উৎস

বান্দরবান জেলার নামকরণ নিয়ে প্রচলিত একটি রূপকথা আজও স্থানীয় জনগণের মাঝে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার সঙ্গে উচ্চারিত হয়। স্থানীয়দের বিশ্বাস অনুযায়ী, এক সময় এই অঞ্চলে অসংখ্য বানর বাস করত। এসব বানর প্রতিদিন ছড়ার পাড় দিয়ে পাহাড়ে লবণ খেতে যেত।

একবার প্রবল বর্ষণের কারণে ছড়ার পানি বৃদ্ধি পায়। ফলে বানরের দল আর সহজে ছড়া পেরোতে পারে না। কিন্তু তারা হাল না ছেড়ে একে অপরকে ধরে ধরে সারিবদ্ধভাবে ছড়া পার হয়। এই বিরল ও বিস্ময়কর দৃশ্য দেখে স্থানীয়রা বিস্মিত হয়।

এই ঘটনার পর থেকেই স্থানটি স্থানীয় মারমা ভাষায় পরিচিতি পায় “ম্যাঅকছি ছড়া” নামে।

  • ম্যাঅক অর্থ “বানর”

  • ছি অর্থ “বাঁধ”

অর্থাৎ “বানরের বাঁধ” বা “বানর দিয়ে বানানো সেতু”।

এই নামটি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাংলা ভাষাভাষী জনগণের উচ্চারণে পরিবর্তিত হয়ে “বান্দরবান” রূপে রূপান্তরিত হয়। আর সেই নামই পরবর্তীতে সরকারি দলিলেও স্থায়ী হয়ে যায়।

🗣️ মারমা ভাষায় বান্দরবানের নাম কী?

যদিও আমরা আজ বান্দরবান নামে জেলাটিকে চিনি, মারমা ভাষায় বান্দরবানের স্থানীয় নাম হলো “রদ ক্যওচি ম্রো”। এই নামটিরও একটি সাংস্কৃতিক গুরুত্ব রয়েছে এবং এটি মারমা জনগোষ্ঠীর নিজস্ব পরিচয়ের অংশ।

📚 বান্দরবান নামকরণের পেছনের ইতিহাস ও ভাষাগত রূপান্তর

পর্যায়বিবরণ
📌 আদিকালএলাকাটি ছিল গভীর জঙ্গল ও বানরের আবাসস্থল
🌧️ এক বর্ষণমুখর দিনবানরদের ছড়া পার হতে বাধা সৃষ্টি হয়
🤝 বানরের দলএকে অপরকে ধরে ধরে ছড়া পার হয়
👀 স্থানীয়দের দেখাএই দৃশ্য দেখে সবাই বিস্মিত হয়ে জায়গাটির নাম দেয় “ম্যাঅকছি ছড়া”
🗣️ ভাষার বিবর্তনমারমা থেকে বাংলা ভাষায় রূপান্তর হয়ে “বান্দরবান” হয়
🗂️ সরকারি স্বীকৃতিআধুনিক যুগে “বান্দরবান” নামটি সরকারিভাবে স্বীকৃত

 

📅 টাইমলাইন: বান্দরবান নামকরণের ধারাবাহিকতা

সময়কাল/পর্যায়ঘটনা
প্রাক-বসতি যুগবনজঙ্গলে বানরের আধিক্য ছিল
লোকজ রূপকথা যুগবানরের ছড়া পারাপারের ঘটনা প্রচলিত হয়
মারমা ভাষার প্রচলন“ম্যাঅকছি ছড়া” নামকরণ হয়
বাংলা ভাষার বিকাশ“বান্দরবান” নামটি রূপান্তরিত হয়
আধুনিক যুগসরকারিভাবে বান্দরবান নাম স্বীকৃতি পায়
বর্তমানবান্দরবান জেলা হিসেবে সুপরিচিত পর্যটন ও সাংস্কৃতিক এলাকা

 

🏞️ বান্দরবানের নামকরণ কেন গুরুত্বপূর্ণ?

বান্দরবানের নাম শুধুমাত্র একটি নাম নয়—এটি একটি সংস্কৃতির উত্তরাধিকার, একটি নৃগোষ্ঠীর ভাষার প্রতিফলন, এবং এক প্রাকৃতিক ঘটনার স্মারক, যা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে গল্প আকারে চলে আসছে। স্থানীয় সংস্কৃতি ও নামকরণকে সম্মান ও গুরুত্ব দেওয়া মানেই আমাদের নিজস্ব ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে লালন করা।

নাফাখুম-রেমাক্রি ট্রেইল
নাফাখুম-রেমাক্রি ট্রেইল

 

বান্দরবান নামটির পেছনের ইতিহাস আমাদের শেখায় কিভাবে ভাষা, সংস্কৃতি, প্রকৃতি ও মানুষের পর্যবেক্ষণ মিলিত হয়ে একটি অঞ্চলের পরিচয় তৈরি করতে পারে। এটি শুধুই একটি নাম নয়; এটি এক গর্বিত ঐতিহ্য, যা বানর, পাহাড়, ছড়া ও মানুষের গল্পের এক অপূর্ব সম্মিলন।

 

আরও পড়ুনঃ

২ thoughts on “বান্দরবান জেলার নামকরণের ইতিহাস”

Leave a Comment