থানচি উপজেলা বাংলাদেশের বান্দরবান জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা। এর আয়তন ১,০২০.৮২ বর্গ কিলোমিটার, যা বান্দরবান জেলার বৃহত্তম উপজেলা হিসেবে পরিচিত। এটি ২১°১৫´ থেকে ২১°৫৭´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯২°২০´ থেকে ৯২°৪১´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত। উত্তরে রুমা উপজেলা, দক্ষিণে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য, পূর্বে মিয়ানমারের চিন রাজ্য ও রাঙ্গামাটি জেলার বিলাইছড়ি উপজেলা, এবং পশ্চিমে আলীকদম ও লামা উপজেলা দ্বারা সীমাবদ্ধ।

থানচি উপজেলা পরিচিতি
থানচি উপজেলার প্রশাসনিক কাঠামো
থানচি থানা ১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৯৮৩ সালে এটি উপজেলায় রূপান্তরিত হয়। উপজেলাটি ৪টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত: রেমাক্রী, তিন্দু, থানচি সদর এবং বলিপাড়া।
থানচি উপজেলার জনসংখ্যা ও ধর্ম
২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, থানচি উপজেলার মোট জনসংখ্যা ২৩,৫৯১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১২,৩৪৪ জন এবং মহিলা ১১,১৪৭ জন। ধর্মীয় বিভাজনে মুসলিম ৭.৬৫%, হিন্দু ২.২৬%, বৌদ্ধ ৫৪.৬৮%, খ্রিস্টান ২৬.৭৫% এবং অন্যান্য ৮.৬৬%।
থানচি উপজেলার শিক্ষা ব্যবস্থা
উপজেলার গড় সাক্ষরতার হার ২৬.৯%। এখানে ১টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ২টি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং ১৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে।
থানচি উপজেলার ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান
থানচি উপজেলায় ৩টি মসজিদ, ২টি মন্দির, ৩১টি বিহার এবং ২৯টি গীর্জা রয়েছে।
থানচি উপজেলার প্রাকৃতিক সম্পদ ও কৃষি
উপজেলার প্রধান নদী সাঙ্গু। প্রধান কৃষি ফসলের মধ্যে ধান, তিল, হলুদ, ভূট্টা, আলু, আদা এবং শাকসবজি উল্লেখযোগ্য। প্রধান ফল-ফলাদি হলো কলা, কাঁঠাল, কমলা ও কাজু বাদাম। প্রাকৃতিক সম্পদের মধ্যে বাঁশ, বেত, কাঠ এবং পাথর উল্লেখযোগ্য।
থানচি উপজেলার পর্যটন ও দর্শনীয় স্থান
থানচি উপজেলার উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে লাংফি তাং পাহাড়, মৌডাক তাং পাহাড়, নপরাই তাং পাহাড়, মুরিফা তাং পাহাড় এবং ডিম পাহাড় রয়েছে। এছাড়াও, সাঙ্গু নদী ও রেমাক্রী খাল পর্যটকদের আকর্ষণ করে।
থানচি উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা
থানচি উপজেলায় যোগাযোগের প্রধান সড়ক হল বান্দরবান-থানচি সড়ক। প্রধান যোগাযোগ মাধ্যম বাস।
থানচি উপজেলার স্বাস্থ্যসেবা
উপজেলায় ১টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ১টি পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র, ৩টি কমিউনিটি ক্লিনিক এবং ২টি পশু চিকিৎসা কেন্দ্র রয়েছে।
থানচি উপজেলার স্যানিটেশন ও পানীয় জল
উপজেলার ২.২৫% পরিবার স্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে, ৪৩.২০% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে এবং ৫৪.৫৫% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই। পানীয় জলের উৎস হিসেবে নলকূপ ৭.০৫%, ট্যাপ ০.১২%, পুকুর ১.৫১% এবং অন্যান্য ৯১.৩২%।

থানচি উপজেলা তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য, বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি এবং ঐতিহাসিক গুরুত্বের জন্য পরিচিত। এটি বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত হয়।