রোয়াংছড়ি উপজেলা পরিচিতি

রোয়াংছড়ি উপজেলা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের পার্বত্য জেলা বান্দরবান-এর অন্তর্গত একটি অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত উপজেলা। পাহাড়, নদী, বন ও বৈচিত্র্যময় আদিবাসী সংস্কৃতির সংমিশ্রণে এটি একটি অনন্য জনপদ হিসেবে স্বীকৃত।

 

google news
গুগোল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

Table of Contents

রোয়াংছড়ি উপজেলার ভৌগোলিক অবস্থান ও আয়তন

বিবরণতথ্য
আয়তন৪৪২.৮৯ বর্গ কিমি
অক্ষাংশ২২°০৩´ থেকে ২২°২০´ উত্তর
দ্রাঘিমাংশ৯২°১৪´ থেকে ৯২°৩০´ পূর্ব
সীমানাউত্তরে রাজস্থলী ও বিলাইছড়ি, দক্ষিণে রুমা, পূর্বে বিলাইছড়ি ও রুমা, পশ্চিমে বান্দরবান সদর

উপজেলার বেশিরভাগ এলাকা পাহাড়, বন এবং নদী দ্বারা পরিবেষ্টিত। প্রধান নদী সাঙ্গু, যা জীববৈচিত্র্য ও কৃষিকাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

রোয়াংছড়ি উপজেলার জনসংখ্যা ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু

উপাদানসংখ্যা
মোট জনসংখ্যা২২,৬২৯
পুরুষ১২,২৪৩
মহিলা১০,৩৮৬

 

রোয়াংছড়ি উপজেলার ধর্ম অনুযায়ী জনসংখ্যা:

  • মুসলিম: ১,৯২৬

  • হিন্দু: ২১৯

  • বৌদ্ধ: ৩,৭৬৬

  • খ্রিস্টান: ১৫,৫৯১

  • অন্যান্য: ১,১২৭

 

রোয়াংছড়ি উপজেলার আদিবাসী জনগোষ্ঠী:

এখানে চাকমা, মারমা, মুরং, ত্রিপুরা সহ বিভিন্ন পাহাড়ি জাতিসত্তার বসবাস রয়েছে, যাঁরা নিজেদের ভাষা, সংস্কৃতি ও ধর্মাচরণে স্বতন্ত্র।

রোয়াংছড়ি উপজেলার প্রশাসনিক কাঠামো

প্রশাসনিক ইউনিটসংখ্যা
ইউনিয়ন৩টি
মৌজা৯টি
গ্রাম১৪৪টি
  • প্রতিষ্ঠা: রোয়াংছড়ি থানা গঠিত হয় ১৯৭৬ সালে এবং ১৯৮৫ সালে এটিকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয়।

 

রোয়াংছড়ি উপজেলার শিক্ষা

রোয়াংছড়ি উপজেলায় শিক্ষার হার তুলনামূলকভাবে কম। এখানে বিভিন্ন স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে:

উপাদানসংখ্যা
শিক্ষার গড় হার২৩.৮%
পুরুষ শিক্ষার হার৩০.৪%
মহিলা শিক্ষার হার১৬.০%
প্রাথমিক বিদ্যালয়৪২
মাধ্যমিক বিদ্যালয়
কমিউনিটি বিদ্যালয়
কিন্ডারগার্টেন

উল্লেখযোগ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান:

  • রোয়াংছড়ি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়

  • বেতছড়া জুনিয়র হাইস্কুল

  • রোয়াংছড়ি আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়

  • দোছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়

 

রোয়াংছড়ি উপজেলার ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসংখ্যা
মসজিদ
মন্দির
গির্জা১৩
কেয়াং (বৌদ্ধ মন্দির)৪৭

 

 

রোয়াংছড়ি উপজেলার সাংস্কৃতিক ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান

প্রতিষ্ঠানসংখ্যা
লাইব্রেরি
কাব
অডিটোরিয়াম
কমিউনিটি সেন্টার
যাত্রাদল
সাংস্কৃতিক সংগঠন
মহিলা সংগঠন
খেলার মাঠ

 

 

রোয়াংছড়ি উপজেলার স্বাস্থ্যসেবা

স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রসংখ্যা
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র
কমিউনিটি ক্লিনিক
ডায়াগনস্টিক সেন্টার
পশু চিকিৎসা কেন্দ্র

 

 

রোয়াংছড়ি উপজেলার আর্থসামাজিক অবস্থা

রোয়াংছড়ি উপজেলার আয়ের উৎস:
আয়ের খাতশতকরা হার (%)
কৃষি৭৯.৭৯%
অকৃষি শ্রমিক৪.৩৭%
ব্যবসা৫.০৮%
পরিবহন ও যোগাযোগ০.২৪%
চাকরি৪.০৭%
নির্মাণ০.৩২%
ধর্মীয় সেবা০.২১%
রেন্ট ও রেমিটেন্স০.১৩%
অন্যান্য৫.৭৯%

রোয়াংছড়ি উপজেলার কৃষিভূমির মালিকানা:

ক্যাটাগরিশতকরা হার (%)
ভূমিমালিক৩৬.৫৮%
ভূমিহীন৬৩.৪২%

শহরাঞ্চলে: ২৬.৬২% পরিবারের কৃষিজমি
গ্রামাঞ্চলে: ৩৯.০৬% পরিবারের কৃষিজমি

রোয়াংছড়ি উপজেলার কৃষি ও উৎপাদন

  • প্রধান ফসল: ধান, তিল, আদা, হলুদ, শাকসবজি

  • প্রধান ফল: কলা, কাঁঠাল, কমলা, আনারস, পেঁপে

  • বিলুপ্ত/বিলুপ্তপ্রায় ফসল: তুলা

 

রোয়াংছড়ি উপজেলার শিল্প ও কুটিরশিল্প

  • শিল্প ও কলকারখানা: ধানকল, আটাকল, বরফকল, করাতকল, ওয়েল্ডিং কারখানা

  • কুটিরশিল্প: তাঁতশিল্প, মৃৎশিল্প, কাঠের কাজ, বাঁশ ও বেতের কাজ

 

রোয়াংছড়ি উপজেলার বাজার ও মেলা

বাজার/হাটউল্লেখযোগ্য নাম
মোট হাটবাজার
বড় বাজাররোয়াংছড়ি বাজার, আলিখং বাজার, ঘেরাও বাজার, গোয়ালিখলা হাট, বুড়োর হাট

 

রোয়াংছড়ি উপজেলার বিদ্যুৎ, পানি ও স্যানিটেশন

  • বিদ্যুৎ: ৭.২৪% পরিবার বিদ্যুৎ সুবিধা পায়, যদিও পুরো উপজেলা পল্লিবিদ্যুতের আওতায় রয়েছে।

  • পানীয়জলের উৎস:

উৎসশতাংশ (%)
নলকূপ১৮.৫৮%
ট্যাপ২.০১%
পুকুর৫.০৪%
অন্যান্য৭৪.৩৭%
  • স্যানিটেশন ব্যবস্থা:

ক্যাটাগরিশতাংশ (%)
স্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার৭.০৩%
অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন৩১.৫৫%
কোনো ল্যাট্রিন নেই৬১.৪২%

 

রোয়াংছড়ি উপজেলার পর্যটন ও দর্শনীয় স্থান

  • রামাজক পাহাড়: রোয়াংছড়ির প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অন্যতম নিদর্শন। এটি ট্রেকিংপ্রেমী ও পাহাড়ি দৃশ্য উপভোগকারীদের কাছে আকর্ষণীয় গন্তব্য।

 

রোয়াংছড়ি উপজেলার প্রাকৃতিক সম্পদ

  • পাথর: উপজেলায় পাথরের প্রচুর মজুত রয়েছে, যা নির্মাণকাজ ও ব্যবসার কাজে ব্যবহৃত হয়।

রোয়াংছড়ি উপজেলা একটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যে ভরপুর অঞ্চল। এখানকার মানুষের জীবনধারা, প্রাকৃতিক পরিবেশ, এবং উৎপাদনশীলতা সমগ্র বান্দরবানের পরিচয় বহন করে। উন্নয়নের কিছু চ্যালেঞ্জ থাকলেও এই উপজেলা পর্যটন, কৃষি ও কুটিরশিল্পে সম্ভাবনাময় একটি এলাকা।

Leave a Comment